ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ কি? রক্তচাপ কিভাবে মাপবেন?

ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ কি রক্তচাপ কিভাবে মাপবেন-Techno Health

ব্লাড প্রেসার কি ?

রক্ত যখন হৃদপিন্ড হতে শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রবাহিত হয়, তখন ধমনীর দেয়ালে এক প্রকার চাপ প্রয়োগ করে, যা রক্তচাপ নামে পরিচিত। 

হৃদপিন্ড সংকোচনের ফলে ধমনী ও শিরায় রক্তের যে চাপ অনুভূত হয়, তাকে সিস্টোলিক (Systolic) চাপ এবং প্রসারণের ফলে যে চাপ সৃষ্টি হয়, তাকে ডায়াস্টোলিক (Diastolic) চাপ বলে। যেহেতু মানুষের শরীরে আদর্শ রক্তচাপ ১২০/৮০ হয়ে থাকে, সেহেতু রক্তচাপ ১২০/৮০ এর উপরে চলে গেলে চিকিৎসকগণ সতর্ক হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। 

ব্লাড প্রেসার মনিটরিং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা মানুষের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের শরীরে আদর্শ রক্তচাপ ১২০/৮০ হয়ে থাকে। সুতরাং রক্তচাপ ১২০/৮০ এর উপরে চলে গেলে চিকিৎসকগণ সতর্ক হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ঠিক সময়ে রক্তচাপ না মাপা হলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মত বিবিধ স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি থাকতে পারে।

হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ হলে কিভাবে বুঝবেন?

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বা হাই ব্লাড প্রেসার সহজে বোঝা যায় না। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও তারা সেই সম্পর্কে অবগত থাকেন না। উচ্চ রক্তচাপের মূল লক্ষণ গুলো আমাদের জানা উচিত। যেমনঃ

১. মাথা ব্যাথাঃ বারবার মাথা ব্যাথা হওয়া উচ্চ রক্তচাপের একটি  লক্ষণ হতে পারে। মাথার পিছনের দিকে বিশেষ করে ব্যাথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

২. ক্লান্তিবোধঃ  অল্পতেই ক্লান্তিবোধ লাগা উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাধারণ কাজের ক্ষেত্রে ক্লান্তি বা দম ফুরিয়ে আসতে পারে।

৩. চোখ ঝাপসা হওয়াঃ চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, হঠাৎ সম্পূর্ণ অথবা আংশিক ভাবে দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়, চোখের সামনে কালচে বিন্দু দেখতে পাওয়াও এক ধরনের উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ।

৪. নাক থেকে রক্ত পড়াঃ সাইনোসাইটিসের জন্যও নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে,তবে বিশেষজ্ঞরা উচ্চ রক্তচাপের ফলেও নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে বলে মতামত দিয়েছেন। 

৫. বুকে ব্যথাঃ উচ্চ রক্তচাপ হৃদযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং বুকে ব্যথার অনুভূতি হয়। বুকে ব্যথা করলে অনেকে উপেক্ষা করেন যা করা মোটেও উচিত নয়। কাজেই এমন লক্ষণ দেখা দিলেই অতিশীঘ্র চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

স্থূলকায় ব্যক্তি, ধূমপায়ী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি সাধারণত বেশি।

প্রতিকার

হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে তা স্বাভাবিক অবস্থায় আপনাকে প্রথমে  আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে। মাথায় পানি দিয়ে বা বরফ দিলে উপকার পেতে পারেন। তবে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে তিনিই দেবেন ওষুধ। কখনো নিজে থেকে রক্তচাপ কমানোর জন্য কোনো ধরনের ওষুধ গ্রহণ করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ হলে কি করবেন?

রক্তচাপ  ৯০/৬০ এর কাছাকাছি বা নিচে থাকলে আমাদের নিম্ন রক্তচাপ (লো প্রেসার) ধরে নিতে হবে। লো প্রেসার তেমন কোন ক্ষতির কারণ নয়, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদী হলে তা চিন্তার বিষয়।

নিম্ন রক্তচাপ এর মূল লক্ষণ গুলো যেমনঃ

১. মাথা ঘোরাঃ এটি একটি স্বাভাবিক লক্ষণ। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে  থাকার পর বসতে গেলে বা অনেকক্ষণ বসে থাকার পর উঠে দাঁড়ালে এই সমস্যা হতে পারে। একটানা কয়েকদিন এমন সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

২. চোখে ঝাপসা দেখাঃ রক্ত চলাচল কমার কারণে শরীরে ভালোভাবে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। এটি চোখের ওপর যথেষ্ট খারাপ প্রভাব ফেলে। এতে রোগী চোখে ঝাপসা দেখতে পারে।

৩. ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়াঃ ত্বক ম্নান বা হলুদ হয়ে যাওয়া লো প্রেসারের একটি লক্ষণ। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

৪. জ্ঞান হারানোঃ  শরীরের রক্তচাপ বেশী কমে গেলে মানুষের অক্সিজেনের এবং রক্তের অভাব হয়। ফলে রোগী জ্ঞান হারাতে পারে।

প্রতিকার

স্ট্রং কফি, চকলেট ইত্যাদি দ্রুত ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। লবণে সোডিয়াম থাকে যা আপনার রক্তচাপ বাড়ায়। বিটের রস মানুষের রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে। প্রেসার কমানোর জন্য কাঠবাদাম ও চিনাবাদাম খেতে পারেন। তবে শরীরে পানিশূন্যতার কারণে নিম্ন রক্তচাপ হলে খাবার স্যালাইন সবচেয়ে উপযোগী।

কোন বয়সে কত ও কেমন প্রেসার থাকা উচিত?

বিভিন্ন বয়সের মানুষের প্রেসার বা রক্তচাপ সবসময় একরকম হয় না। চিকিৎসকদের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের সিস্টোলিক প্রেসার ১২০ mm Hg এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৮০ mm Hg বা তার কম হওয়া প্রয়োজন। 

আপনার রক্তচাপ ১২০/৮০ mm Hg হলে তা স্বাভাবিক রক্তচাপ। প্রেসার যদি ১৩০-৮০ mm Hg হয়, তাহলে তা বর্ডারলাইন হিসেবে ধরা হয়। আর যদি তা ১৪০-৯০ অতিক্রম করে, তবে সতর্ক থাকতে হবে।

২১ থেকে ৩০ বছরঃ এ বয়সের পুরুষদের সিস্টোলিক প্রেসার ১১৯ mm Hg এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৭০ mm Hg হওয়া ভালো। নারীদের ক্ষেত্রে ১১০/৬৮ mm Hg স্বাভাবিক বলে বিবেচিত।

৩১ থেকে ৪০ বছরঃ এই বয়সের পুরুষদের সিস্টোলিক প্রেসার ১২০ mm Hg এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৭০ mm Hg হওয়া উচিত। মহিলাদের ক্ষেত্রে ১১০/৭০ mm Hg স্বাভাবিক মাত্রা।

৪১ থেকে ৫০ বছরঃ এই বয়সের পুরুষদের সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২৪ mm Hg এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৭৭ mm Hg হওয়া উচিত। এটাই পুরুষদের স্বাভাবিক রক্তচাপ মাত্রা৷ মহিলাদের ক্ষেত্রে ১২২/৭৪ mm Hg হলে তা স্বাভাবিক।

৫১ থেকে ৬০ বছরঃ পুরুষদের জন্য ১২৫ mm Hg সিস্টোলিক প্রেসার এবং ৭৭ mm Hg ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কে স্বাভাবিক রপক্তচাপ বলে মনে করা হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে ১২২/৭৪ mm Hg স্বাভাবিক মাত্রা।

৬০ থেকে ৬৫ বছরঃ এই বয়সি পুরুষদের প্রেসার ১৩৩/৬৯ mm Hg পর্যন্ত স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। এর চেয়ে কম বা বেশি হলে তা বেশ চিন্তনীয় বিষয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে ১৩৩/৬৯ mm Hg একটি স্বাভাবিক মাত্রা। এর চেয়ে কম বা বেশি হওয়া স্বাভাবিক নয়।

(সোর্সঃ News18 বাংলা, উইকিপিডিয়া)

ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ কিভাবে মাপবেন?

রক্তচাপ যে যন্ত্র দিয়ে মাপা হয় তাকে ইংরেজিতে স্ফিগমোম্যানোমিটার (Sphygmomanometer) বলা হয়। এই কঠিন নাম মনে রাখতে পারায় আমরা ব্লাড প্রেসার মেশিনও বলে থাকি। বাজারে ডিজিটাল ও অ্যানালগ দুই ধরনের যন্ত্রই পাওয়া যায়। অ্যানালগ বা ম্যানুয়াল যন্ত্রটি ব্যাবহার করতে একটি স্টেথেস্কোপও লাগবে।

বাজারে অনেক ডিজিটাল ব্লাড প্রেসারের মেশিন পাওয়া যায়। কিন্তু অনেক সময় ডিজিটাল মেশিনে ভুল রিডিং আসে যদি মেশিনটি মানসম্মত না হয়। ডিজিটাল মেশিন ব্যবহার করলে আপনার ভালো মানের মেশিন ব্যবহার করা উচিত।

রক্তচাপ মাপার আগে কিছু নিয়ম মেনে কাজ করলে নির্ভুল রিডিং পাওয়া যায়। নিয়মগুলো নিম্নে দেওয়া হলঃ

১. রোগীকে প্রথমে চেয়ারে বসে পেছনে হেলান দিয়ে, দুই হাত টেবিলের উপর রাখতে হবে। রোগীর হাত এমনভাবে রাখতে হবে যেন তা রোগীর হার্টের সমতলে থাকে। এক্ষেত্রে হাফ হাতা অথবা ঢিলেঢালা জামা পরে থাকলে ভালো হয়। এবার রক্তচাপ মাপার কাপ কনুই থেকে ২.৫ সে.মি উপর বেঁধে নিন। কাফের সাইজ স্থুল ব্যক্তি ও বাচ্চাদের অনুসারে ভিন্ন হয়।

২. কনুইয়ের উপরে ধমনির অবস্থান নির্ণয় করে আমাদের স্টেথোস্কোপের ডায়াফ্রাম বসাতে হবে। ডায়াফ্রামটি কাপড়ের উপরে রাখা যাবে না।

৩. অনেক সময় প্রেসার মাপতে গিয়ে প্রকৃত সিস্টোলিক প্রেসার এবং শব্দ শুনতে পাওয়ার মাঝে এক ধরনের গ্যাপ তৈরি হয়। এটাই অসকালটেটরি (Auscultatory Gap) গ্যাপ। তা এড়াতে সর্বপ্রথম পালপেটরি মেথডে সিস্টোলিক প্রেসার দেখতে হবে। রেডিয়াল ধমনির উপরে হাত রেখে পাম্পার দিয়ে পাম্প করে কাফটি ফোলাতে হবে যতক্ষন না পর্যন্ত পালস বন্ধ হয়। এরপর ধীরে ধীরে চাপ কমাব এবং ধমনীতে রক্ত চলাচল করার কারণে সৃষ্ট শব্দ ( korotcoff sound) শুনবো। শব্দ যেখানে শুরু হয় সেটিকে সিস্টোলিক প্রেসার এবং যেখানে শব্দ শেষ হবে তাকে ডায়াস্টলিক প্রেসার হিসেবে ধরে নেব।

উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ দেখা দিলে ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তাছাড়া প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

------------ Shop From Techno Health ------------

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top